ইসলামকে রক্ষা করা একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ ও
নিঃশর্ত কর্তব্য। কোন শর্ত বা দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছাড়াই এই কর্তব্য পালন করতে হবে।
এই দ্বায়িত্ব পালন করার জন্য সকল কর্তৃপক্ষ,
জনসমষ্টি এবং দ্বিনী জ্ঞান চর্চার প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনকে অবশ্যই গভীর ও ব্যাপক
চিন্তা-ভাবনা করতে হবে। এজন্য নিজেকে সকল দিক দিয়ে প্রস্তুত করতে হবে। ইসলাম
সংরক্ষণ কাজে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও আয়োজন গ্রহন করতে হবে।
ইসলামের বিশ্বাস, কর্তৃপক্ষ, সংস্থা,
ব্যাবস্থাপনা, আইন-বিধানকে রক্ষা করতে হবে – যেমন করে খোদ রাসুল করীম (সাঃ)
করেছেন। ...
এখনতো গোটা ইসলামই প্রায় অপরিচিত হয়ে পড়েছে –
শুধু নামটাই বাকী আছে। ক্বোরাণ উল্লেখিত অপরাধের দন্ডসমূহ এখন উপেক্ষিত। ক্বোরাণ
উল্লেখিত সে সব দন্ডের করা আয়াত হিসাবে পাঠ করা হয় বটে – কিন্তু এই পাঠ করা ছাড়া
আর কোন কার্যকারিতাই অবশিষ্ট রাখা হয়নি। আমরা এখন ক্বোরাণ পাঠ করি প্রতিটি হরফের
মাখরাজ ঠিকভাবে আদায় করার জন্য – যেন উচ্চারণে ভুল না করি সেজন্য গুরুত্ব দেয়া
হচ্ছে। কিন্তু সামাজিক জীবনের বাস্তব বিপর্যয়, সারা দেশে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় বা
সরকারের চোখ-কানের নিকটেই সরকারী কর্মচারীদের আনুকুল্যে যাবতীয় পাপ ও চরিত্র
ধ্বংসকারী কার্যাবলী ব্যাপকভাবে সংঘটিত হচ্ছে, পাপ পংকে নিমজ্জিত গোটা সমাজের জনগণ
– সেদিকে আমাদের ভ্রুক্ষেপ নেই। শুধু তাই
নয়, সে জন্য আমাদের যা কোন দায়িত্ব আছে – তাও আমরা চিন্তা করি না, চিন্তা করার
প্রয়োজনও মনে করি না। আমরা
ক্বোরাণের আয়াতটি পড়ে শুধু এতটুকুই মনে
করি যে অপরাধের শাস্তির বিধান ক্বোরাণে আছে – কিন্তু সে বিধান কার্যকর করার জন্য
আমাদের করণীয় নিয়ে ভাবিনা।
এখন প্রশ্ন হল, রাসুল করীম (সাঃ) কি
ক্বোরাণে বর্ণীত বিধিবিধান সম্পর্কিত আয়াতসমূহ কি শুধু সুন্দরভাবে তেলাওয়াত করেই
তাঁর দ্বায়িত্ব শেষ করেছেন, না কি এগুলো
বাস্তবায়িত করার, কার্যকর করার ব্যাবস্থা গ্রহন করেছেন? রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর
খলীফাগণ কি শরীয়তের হুকুম-আহকাম লোকেদের মধ্যে শুধু পৌঁছিয়ে দিয়েই দ্বায়িত্ব শেষ
করেছেন, না কি তা কার্যকর করেছেন? ...
ইসলাম তো দুনিয়ায় এসেছে ন্যায়বাদী সুবিচারক
সরকারের মাধ্যমে সমাজকে সুসংবদ্ধ, দোষমুক্ত ও সুসংগঠিত করার জন্য। আর ইসলামি
সরকারের পক্ষেই তা করা সম্ভব। আমরা (আলেম ও ফিকীহরা) ইসলাম সংরক্ষণের জন্য
বিশেষভাবে দ্বায়িত্বশীল। এটা অতীব
গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য। নামাজ ও রোজার
তুলনায় এর গুরুত্ব মোটেই কম নয়। এ এমন একটি মহান কর্তব্য যা পালনের জন্য ইতিহাসে
বহু পবিত্র রক্ত প্রবাহিত হয়েছে। ইমাম হুসাইন (রাঃ) এর রক্তের চেয়েও কি আমার-আপনার
রক্ত বেশী মূল্যবান? তাঁর রক্তই তো প্রবাহিত হয়েছে ইসলামের পথে, কেবল ইসলাম
রক্ষার্থে।
এই কথাটির তাৎপর্য আমাদের খুব ভালভাবে
অনুধাবন করা উচিত। আমরা রাসুলুল্লাহ (সাঃ)
এর উত্তরাধিকারি হতে পারব, তাঁর খলিফা হতে পারব যখন নিজেরা ইসলামকে আসল রূপে বুঝব
এবং জনসাধারণকে বুঝাবো।
একথা বলা উচিৎ হবে না যে, ইমাম মাহাদী (আঃ)
না আসা পর্যন্ত আমরা একাজ (ইসলামী সরকার গঠন) করব না। আমরা কি তাঁর (অর্থাৎ ইমাম
মাহাদী আঃ এর) অপেক্ষায় নামাজ পড়ার কাজ ছেড়ে দিয়েছি?
এরূপ কথা বলাও সম্পূর্ণ অবাঞ্ছীত – যেমন কেউ
কেউ বলে থাকেন যে, পাপের ব্যাপক প্রচলন হোক, তা’ হলেই তো ইমাম মাহাদী (আঃ)এর আগমন
আসন্ন হবে। তার অর্থ তারা বলতে চান যে, পাপের ব্যাপক বিস্তার না হওয়া পর্যন্ত ইমাম
মাহাদী (আঃ) এর আগমন সংঘটিত হবে না। একথা
খুবই অবাঞ্ছনীয়। ... ইসলামের সমস্ত
বিধি-বিধান অধ্যায়নে আমাদের গভীরভাবে মনোনিবেশ করা কর্তব্য। ইসলামের প্রকৃত রূপ
জনগনের সামনে তুলে ধরুন। এ বিষয়ে লেখনী
চালনা করুন। চতুর্দিকে তা প্রচার করে দিন। আল্লাহর মর্জী হলে তা জনগনের উপর ব্যাপক
প্রভাব বিস্তার করবে।
=
- বিলায়েতে ফকীহ, ইরাকের নজফে নির্বাসিত থাকা
কালে ওলামায়ে কিরাম ও মাদ্রাসা ছাত্রদের উদ্দেশ্যে ইমাম খোমেনির বক্তৃতা থেকে
নির্বাচিত উদ্ধৃতি।