হযরত শাহ ওয়ালীউল্লাহ মোহাদ্দেছ দেহলবী (রঃ) হুজ্জাতুল্লাহিল বালেগা কিতাবে লিখেছেনঃ-
"জন্মগত স্বভাবের কারণে মানুষের মধ্যে পার্থক্য হয়।"
"সমস্ত পয়গম্বর (আ:) একমত যে সকলের ধর্মই এক। পার্থক্য শুধু শরীয়ত ও ধর্মের নিয়মাবলীতে।"
"মযহাবে অভীজ্ঞজনের মযহাব সত্য।"
"হুজুর (সাঃ) এরশাদ করিয়াছেন - আমাকে তোমাদের সহজতার জন্য প্রেরণ করা হইয়াছে, কঠোরতার জন্য নয়।"
"আল্লাহতা'লা এরশাদ করিয়াছেন, হে বিশ্বাসী সম্প্রদায়, অনেক কিছু প্রার্থনা করিওনা। যদি তোমাদের জন্য উহা উন্মুক্ত হইয়া যায় তখন তোমরা উহাকে অপছন্দ করিবে। তাই প্রশ্নকারীদিগকে হুযুর (সাঃ) পছন্দ করিতেননা এবং বলিতেন - আমি তোমাদিগকে যাহা কিছু বলি তোমরা উহাকেই যথেষ্ট মনে কর, বেশী কিছু জিজ্ঞাসা করিওনা। তোমাদের পূর্ব্ববর্তী উম্মতগণ এই কারণেই ধ্বংশ হইয়া গিয়াছে যে তাহারা বহু কিছু জিজ্ঞাসা করিত এবং নবীদের বিরোধিতা করিত। তিনি আরও এরশাদ করিয়াছেন - মুসলমানদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি পাপী যাহার প্রশ্ন করায় কোন কিছুকে হারাম করিয়া দেওয়া হয়।"
"মোমেন বান্দা নরম শাখার ন্যায়।"
"বান্দার উপর আল্লাহর হক এবং ফরয এই যে বান্দা আল্লাহকে অসীম সন্মান করিবে।"
"যে ধর্মের ব্যাপারে কঠোরতা অবলম্বন করে - তাহার সাথে আল্লহও কঠোর ব্যাবহার করেন।"
"শিষ্টতা শিক্ষা দেওয়ার জন্য ইয়াতীমকে শাসন করা অন্যায় নহে; কিন্তু কষ্ট দেওয়ার ইয়াতিমকে আঘাত করা পাপ।"
"ভুল করিয়া পাপ করিলে অনেক বিষয়ে ক্ষমা পাওয়া যায়। এই ণীতি মোতাবেক মানুষের এলেম স্বভাব জাহের বাতেন থাকে - এই মোতাবেকই ব্যক্তির জন্য শরীয়ত নির্ধারিত হয়।"
নবুয়ত প্রায়শঃ মিল্লাতের অনুজ্ঞ থাকে। যেমন আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করিয়াছেন – “তোমাদের পিতা ইব্রাহীমের মিল্লাত”। আরও এরশাদ করিয়াছেন – “ইব্রাহীমও নূহের তরিকা ভুক্ত ছিলেন”। ইহার রহস্য এইযে বহুদিন পর্যন্ত লোক একটি মাযহাবের অনুসারী থাকে এবং সেই ধর্মের নির্দেশাবলীর সন্মান করিয়া থাকে। ফলে উহার কার্যাবলী এত প্রসিদ্ধ হইয়া যায় যে কোন মতেই উহা অস্বীকার করা যায় না। যখন সেই নবীর বাণী সমূহের মধ্যে লোকেরা পরিবর্তন পরিবর্ধন করিয়া ফেলে তখন অন্য একজন নবীর আবির্ভাবের সময় উপস্থিত হয় যেন পূর্ববর্তি মাযহাবের দোষাবলী দূর হইয়া যায়। এই দ্বিতীয় নবুয়ত লোকজনের মধ্য হইতে প্রসিদ্ধ এবং সঠিক আহকামের অনুসন্ধান করে। অনুসন্ধানের পর যাহা সঠিক নির্দোষ মনে করেন দ্বিতীয় নবুয়ত উহা পরিবর্তন না করিয়া লোকেদের মধ্যে বলবৎ রাখেন এবং উহা পালন করার জন্য নির্দেশ দেন। আর যাহার মধ্যে দোষ পাওয়া যায় উহার সংশোধণ করেন, যাহাতে কিছু সংযোগের প্রয়োজন হয় উহাতে সংযোগ করেন। প্রায়শঃ দ্বতীয় নবী ঐ সমস্ত কাজে যাহা প্রথম শরীয়তে বাকী থাকিয়া যায় নিজের উদ্দেশ্য এবং দাবীর উপর গবেষণা করেন। তখন বলা হয় যে এই নবী অমুক নবীর মিল্লাত অথবা সম্প্রদায়ভুক্ত। অধিকাংশ সময় এই সমস্ত নবুয়ত মিল্লাতের বিভিন্নতার দরুণ বিভিন্ন প্রকারেরও হইয়া থাকে। মযহাবের একটি বিশেষরূপে অবতীর্ণ হওয়ায় দ্বিতীয় প্রকার এক অন্য প্রকারের পর্যায়ভুক্ত। আল্লাহ তায়ালা যদিও সময় ও কাল হইতে পবিত্র তথাপি কোন না কোন কারণে যুগ ও যুগের বস্তুর সাথে সম্পর্কযুক্ত। তাই হুযুর (সাঃ) এরশাদ করিয়াছেন – প্রতি শতাব্দীর পর আল্লাহ তায়ালা বিরাট ঘটনা সমূহের মধ্যে কোন না কোন ঘটনা অবতীর্ণ করিয়া থাকেন। হযরত আদম (আঃ) এবং অন্যান্য নবী (আঃ)-গণও শাফায়াতের হাদীসে এই সম্বন্ধে কিছুটা এরশাদ করিয়াছেন – প্রত্যেক নবী কেয়ামতের দিন বলিবেন যে আল্লাহ তায়ালা আজ যেমন ক্রোধান্বিত হইয়াছেন অন্য কোন দিন তেমন আর হন নাই এবং ভবিষ্যতে আর কোন দিন হইবেনও না।
"যখন পৃথিবী শরীয়ত গ্রহন করার জন্য প্রস্তুত হয় এবং ব্যাবস্থাপনা নির্ধারিত করার সময় হয়, তখন আল্লাহপাক তাজাল্লী প্রকাশ করিয়া মানুষের জন্য ধর্মকে গ্রহনযোগ্য করিয়া দেন। সে অনুযায়ী মালায়ে আলা উন্নততর শক্তিতে শক্তিবান হইয়া যায়। তখন সামান্ন একটি কারণ আল্লাহর বকশীশের দ্বারে আঘাত করার জন্য যথেষ্ট হইয়া যায়। সময়ে বীজ বপন করিলে অতি সহজেই ফসল পাওয়া যায়। অসময়ে হাযার চেষ্টায়ও উহা পাওয়া যায় না।"